ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের বোচাপুকুর এলাকায় মোহন ইক্ষু খামারের সাথেই ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের খেজুর বাগান। শীত আসলেই প্রতি বছর এ বাগানটি লিজ নিয়ে গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও সেই রস দিয়ে গুঁড় তৈরি করেন গাছিরা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিদিন এই বাগানের ৭শত গাছ থেকে প্রায় এক হাজার লিটার খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত গাছে হাড়ি টাঙ্গান গাছিরা। গাছের ফোঁটা ফোঁটা রসে পূর্ণ হয় হাড়ি। সেই রস ভর্তি হাড়ি নামিয়ে চুলার উপরে বিশেষ বড় টিনের কড়াইয়ে ঢেলে আগুনে জ্বালিয়ে ঘন করার পর কড়াই চুলা থেকে নামিয়ে সেটি ঘুটনির সাহায্যে কিছুক্ষণ ঘুটা হয়। ঘুটার পরে সেই ঘন তরল গুঁড় ছোট ছোট মাটির খাচে ঢালা হয়। কিছুক্ষণ পর সেগুলো জমাট বেঁধে ঢিকা গুঁড়ে পরিণত হয়। এভাবেই দিনভর চলতে থাকে গাছিদের গুঁড় তৈরি।
আর প্রাকৃতিক পরিবেশে গুঁড় তৈরি দেখতে, খেজুরের রস ও গুঁড় খেতে এবং কিনতে স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রতিদিন এখানে আসেন শত শত দর্শনার্থী ও ক্রেতারা।
বোচাপুকুর গ্রামের মাজেদ বলেন, এখানকার গুঁড় ও রস খুবই সুস্বাদু। তাই দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে আসেন রস ও গুঁড় কিনতে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে মিলন হোসেন এসেছেন গুঁড় কিনতে। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করি। সেখানকার বস আমাকে খেজুরের গুঁড় নিয়ে যেতে বলেছেন। তাই আমি সরাসরি এখানে গুঁড় কিনতে এসেছি।
নাটোর জেলার লালপুর থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুঁড় তৈরির করার জন্য আসা আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে গাছের ছাল কেটে হাড়ি টাঙ্গানোর কাজ দুপুর পর্যন্ত চলে। আর এই হাড়িতে ফোঁটায় ফোঁটায় রস জমতে থাকে। পরে সেই হাড়িগুলো রাত ৩টা থেকে গাছ থেকে নামানো হয়। হাড়ি ভর্তি সেই রস দিয়ে গুঁড় তৈরি করা হয়। এখানে দুই প্রকার গুঁড় তৈরি করা হয়। একটি স্থানীয় ভাষায় ঢিকা গুঁড় ও লালি গুঁড় যেটিকে তরল গুঁড় বলা হয়। এসব প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে এবং খেজুরের রস প্রতি লিটার ৮০ টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে।
আর গতবছর এই বাগান রাজশাহী জেলার গাছিরা লিজ নিয়েছিলেন মাত্র ৪০ হাজার টাকায়। কিন্তু এবার বাগানটি সুগার মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এক বছরের জন্য ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন স্থানীয় দুই যুবক। বতর্মানে শীত কম হওয়ায় গাছ থেকে রস কম বের হচ্ছে। বর্তমানে ৭শত গাছ থেকে দিনে ১ হাজার লিটার রস পাওয়া যাচ্ছে। শীত বৃদ্ধি পেলে এই বাগান থেকে দিনে ৩ হাজার লিটার রস সংগ্রহের আশা করছেন বলে জানান বাগান লিজ নেওয়া আল আমীন।
এছাড়াও তিনি বলেন, এখানে নির্ভেজালভাবে গুঁড় তৈরি করা হচ্ছে। তাই এখান থেকে প্রচুর মানুষ রস ও গুঁড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে ভোররাত থেকে সারাদিনে অনেক মানুষের ভিড় হয়।
এই খেজুর বাগানটি দর্শনীয় জায়গায় পরিণত হচ্ছে। এটিকে বিকশিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে বলে জানান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান।