মোঃ হাবিব ওসমান, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ প্রতিবেদক : ঝিনাইদহের শৈলকুপায় জিকে সেচ প্রকল্পের গোলকনগর খালের উপর ব্রীজটি নির্মিত হয়েছিল। দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ভেঙ্গে পড়ে আছে। এতে খালের দু’পাড়ের প্রায় ২০ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এলাকাবাসি ভাঙ্গা ব্রীজের উপর কাঠের পাটাতন দিয়ে কোন রকমে পারাপারের ব্যবস্থা করেছেন। মানুষ জীবন জীবিকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রীজটির ওপর দিয়ে পার হচ্ছেন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে স্কুল ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীসহ নারী ও শিশুরা। হাটফাজিলপুর-নিত্যনন্দনপুর বাওড় এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র রাস্তার গোলকনগর খালের উপর ভাঙ্গাচোরা এ ব্রীজটি।
উপজেলার গোলকনগর গ্রামের মধ্যেবয়সি মো. শামসুদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রামের ব্রীজটি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভেঙ্গে পড়ে আছে। দির্ঘ এ সময়ে ব্রীজটি পার হতে গিয়ে তিনজন মারা গেছে। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকে। তিনি আরো বলেন, আমি নিজেও ব্রীজ থেকে নিচে পড়ে আহত হয়েছিলাম। এরপর থেকে আর চলাফেরা বা ভারি কাজ করতে পারি না। এলাকার মানুষ টাকা উঠিয়ে আমাকে একটা চায়ের দোকান করে দিয়েছেন। সেই চা দোকান দিয়ে এখন আমার সংসার চলছে কিন্তু ব্রীজটা আজও হলো না, এভাবেই আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রীজের পশ্চিমপাশে উপজেলার ১২নং নিত্যনন্দনপুর ইউনিয়ন। পূর্বপাশে হাটপাজিলপুর বাজার। নিত্যনন্দনপুর ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২ গ্রামের মানুষ ব্রীজটি পার হয়ে বেচা-কেনাসহ প্রযোজনীয় কাজে হাটফাজিলপুর বাজারে যান। ব্রীজটির পশ্চিমপাশ ঘেষে এ ইউনিনের কয়েকটি গ্রাম মাত্র ১ থেকে ২ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই হাটফাজিলপুর বাজার কিন্তু ব্রীজটি ভাঙ্গা থাকায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাদের ভারি মালামাল নিয়ে ওই বাজারে যেতে হয়। খালের দুই পাশে পাকা রাস্তা থাকলেও ভাঙ্গা ব্রীজটির কারনে গাড়ি চলাচল করতে পারেনা। এছাড়া ব্রীজটির রেলিং ভেঙ্গে পড়েছে। ব্রীজের মাঝখানের অংশও ভেঙ্গে পড়েছে। ব্রীজের ভেঙ্গে যাওয়া অংশে কাঠরে পাটাতন দিয়ে ঝুকির্র্পণ চলাচল করছে গ্রামবাসী। অনেকে ইজিবাইক বা চাষকাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রলি নিয়ে ভাঙ্গা ব্রীজটি পারাপার হয়ে থাকে।
একই গ্রামের আব্দুল আলিম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ব্রীজর কথা বলব কি আর। কত লোক এলোগেলো আমাদের আশ্বাস দিল কিন্তু ১০ বছরেও ব্রীজ হলো না। আমাদের এমপি একটা অনুষ্ঠানে এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু ব্রীজ ভাঙ্গা দেখে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য গ্রাম দিয়ে গিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন তবুও ব্রীজ করার জন্য কোন উদ্যোগ নিলেন না। আমাদের গ্রামের মানুষ তাদের ফসল নিয়ে ব্রীজ পারাপার হতে পারে না ঠেলাগাড়ির মতন মালা-মাল পরিবহন করতে হয়।
মো. রোকনুর জ্জামান রোকন বলেন, এই ব্রীজটা আমাদের গ্রামসহ ১৫ থেকে ২০ গ্রামের মধ্যে যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা মাধ্যম। এই ব্রীজ পারাপার হতে গিয়ে আমার বাবাও পড়ে গিয়েছিল। ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ার কারনে আমরা আর্থিকভাবে যমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। অনেক সময় সোজা রাস্তা রেখে চার পাঁচ গ্রাম ঘুরে বাজারে যেতে হয়। এই ব্রীজটা ভাঙ্গার কারনে। আমরা গ্রামের সবাই টাকা তুলে গাছ কেটে কাঠের পাটাতন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই চলাচলের একটা ব্যবস্থা করেছি। এভাবেই চলে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের ব্রীজটা বহুদিন ধরে ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে। অনেকে মারা গেছে অনেকে আবার পড়ে আহত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের এমপির কাছে গিয়েছি কোন কাজ হয়নি। সবাই বলে এটা ওয়াবদার ব্রীজ এটা তারা করবে। কার ব্রীজ কে করবে আমরা বুঝি না। আমরা চাই আমাদের ব্রীজটা যেন করে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থী রাজিব হোসেন বলেন, এ ভাঙ্গা ব্রীজের উপর দিয়ে ঝুঁকিভাবেই পারাপার হতে গিয়ে অনেক সময় ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন নিচেই পড়ে যায়। ছোট বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার সময় ব্রীজ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে।
ঝিনাইদহ পাওয়ার বিভাগ বাপাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান জানান, আমাদের কোন উন্নয়ন প্রকল্প নেই। যতটুকু বাজেট হয় সেগুলো দিয়েই আমরা মেরামত কাজ করি। এই ব্রীজের সমস্যার কথাটা আমি জানি। শুধুমাত্র এই ব্রিজ না আরো অনেক ব্রিজ খারাপ আছে। তবে এই ব্রিজের যে অবস্থা ওখানে নতুন ব্রীজ তৈরি করতে হবে। এজন্য আমরা এ বছর আলাদাভাবে প্রস্তাবনা দিয়েছি ব্রীজটির জন্য। এছাড়া অন্যান্য ব্রীজের জন্যও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, পাশ হলে ব্রীজের কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।