খোকন মজুমদার রাজীব, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে একটি পরিবার গত ৯ বছর যাবৎ অতিষ্ট বলে অভিযোগ উঠেছে। অসহায় এতিম পরিবারটি বাড়ি ছেড়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মো. ওমর ফারুকের দায়ের করা অভিযোগে আনোরায়া উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের আমান উল্লাহ পাড়ার মুছা মেম্বার প্রকাশ খুনী মুছা, আইয়ূব শাহ্, ইউসুফ, ইসমাইল, নাজিমুদ্দিন, শামসুদ্দিন, দিদার শাহ্, রুবেল, কায়সার, জাকির হোসেন, আরাফাতসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ থেকে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার আমান উল্লাহ পাড়ার মুছা মেম্বারের নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রয়েছে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যকলাপ ও ভূমিদস্যুতার কারণে ভুক্তভোগিরা এলাকায় থাকতে না পেরে শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। অভিযোগকারী এতিম হওয়ায় তার পৈত্রিক ভূমি গ্রাস করার জন্য সন্ত্রাসীরা লোলপ দৃষ্টি দিয়েছে। অপরদিকে, মুছা এলাকার জনপ্রতিনিধি হয়েও এমন কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় স্থানীয়রাও বিপাকে বলে জানা যায়। অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, সংঘবদ্ধ গ্রুপটি জোরপূর্বক জমি দখলে নেওয়ার জন্য অভিযোগকারীর ভূমিতে থাকা দীর্ঘদিনের পুরোনো ১০/১২টি বিভিন্ন প্রজাতির বড় গাছ কেটে ফেলেছেন। গত কয়েক দিন আগেও একইভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় ভিটেভূমি দখল করতে গেলে বাঁধা দেওয়ায় মারধর করে ওমর ফারুক’কে আহত করেন। ওই সময় ৯৯৯ নম্বরে কল করা হলে পুলিশ আসার আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সরে গেলে ভূমিদস্যুরা আবারো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বসতঘরে ভাঙচুর চালায়। এমনকি জোরপূর্বক ভূমিতে স্থাপনা তৈরি করতে থাকে। এই অবস্থা দেখে পুনরায় ভুক্তভোগিরা ৯৯৯ নম্বরে কল করে অভিযোগ জানালে ভোর রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগে জানান। আরও উল্লেখ রয়েছে, মুছা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এলাকায় সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমানে ওমর ফারুক ও তার পরিবার নিরাপত্তারহীনতায় ভুগিতেছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা নিজ বাড়িতেও যেতে পারছেন না। সূত্রে জানা যায়, বিরোধীয় জমিতে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার জন্য চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা হাকিমের আদালতে ওমর ফারুক একটি মিছ মামলা দায়ের করলে আদালত দু’পক্ষের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওসিকে আদেশ দেন। তার কিছুদিন পর অনধিকার প্রবেশ করে আবারো ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধন করলে, বাদি পুনরায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি ফৌজদারী অভিযোগ করেন। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে এফ.আই.আর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আনোয়ারার ওসি’কে নির্দেশ দেন। কিন্তু বাদি পক্ষের অভিযোগ পুলিশ বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে ১নং বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ সোলায়মানের নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুফল চন্দ্র সিংহ জানান, ‘ওটা নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।’ অভিযাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছা মেম্বার প্রকাশ খুনি মুছা জানান, ‘আমি কোন এতিমের জমিজামা দখল করতে যায়নি। ঘটনাটি হল ওমর ফারুক ও ইউসুফদের মধ্যে। আমি এলাকার মেম্বার; জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি সমাধা করার জন্য মন্ত্রী, মহোদয় ও বিভিন্ন জায়গায় যাওয়াতে ওরা আমাকে অভিযুক্ত করছে। আসলে এটা সত্য নয়। এর আগে জেনেছি ওই বিষয়ে দুই পক্ষকে ইউএনও সাহেব নোটিশ করেছেন।’ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগকারী ওমর ফারুক বলেন, ‘মুছা মেম্বার যদি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সমস্যাটি সমাধান করতে চাইতো তাহলে অবশ্যই আমাদের ডেকে পাঠাত। কিন্তু সে নিজেই দাড়িয়ে থেকে লোকজন নিয়ে আমাদের জমি দখল করছেন।’ ভুক্তভোগীদের দাবি, ভূমিদস্যুদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনা হোক। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দুলাল মাহমুদ জানান, ‘জেনেছি বিরোধীয় জমির খরিদাসূত্রে দখলদার ওমর ফারুক বর্তমান মালিক। কিন্তু পৈত্রিক সূত্রে মো. ইউসুফেরা জমির মালিক বলে দাবি করছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে আমরা উভয়পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় হাজির হতে বলেছি।’