গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট গোপালগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে “জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে” গোপালগঞ্জে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত শনিবার বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে অনুষ্ঠিত উক্ত মানববন্ধনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি বিল্লু মঙ্গল মজুমদার, সহ-সভাপতি লাবু বিশ্বাস, নিপুণ সরকার, সাধারণ সম্পাদক শ্রী লিটন কুমার মজুমদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক জীবনানন্দ বিশ্বাস, সজল হীরা, সদস্য উত্তম মন্ডল এবং হিন্দু ছাত্র মহাজোটের নেতা দীপ্ত ঢালীসহ হিন্দু মহাজোটের গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সকল নারী ও পুরুষ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি বিল্লু মঙ্গল মজুমদার বলেন, স্বাধীনতার পর হতেই ব্যাপকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মঠ মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর, জমি দখল, কিশোরী অপহরণ, ভয়-ভীতিসহ নানা কারণে দেশের হিন্দু সম্প্রদায় দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। ক্রমাগত দেশত্যাগের কারণে দেশ হিন্দুশুন্য হওয়ার পথে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পূর্বে এই ভূখন্ডে হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৩৩%, পাকিস্তান আমলে তা নেমে দাড়ায় ২২% এ। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারীতে হিন্দু সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩.৫%, ২০১৫ সালে ১০.৭%, ২০২২ সালে মাত্র ৭.৯৫%। ২০১৫ সাল থেকে মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে সরকারী পরিসংখ্যান মতে, হিন্দুর সংখ্যা কমেছে ২.৮%। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে এদেশ অচিরেই হিন্দুশূন্য হবে তা বলাই বাহুল্য। অথচ জাতীয় সংসদ সর্বদাই নিরব ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সংসদে ১৬ জন হিন্দু এমপি থাকলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের সমস্যা নিরসনে তাদের কোন ভূমিকা নাই। অর্থাৎ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করার মত কোন সাংসদ জাতীয় সংসদে নেই।
মহাজোটের আরেক নেতা ডেভিড বৈদ্য বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তারা তাদের একমাত্র দাবী থেকে সরে এসে ভোল পাল্টিয়ে “সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন” নামে দুটি দাবী নিয়ে হিন্দু সমাজকে বিভ্রান্ত করছে, ব্লাকমেইল করছে। মূলতঃ একটি সমাজকে সুরক্ষার জন্য যা যা আইন দরকার, তার সবই আছে। রাজনৈতিক কারণে তা আইন বাস্তবায়ন হয় না। দেশে মানবাধিকার কমিশন আছে। অতীতে বিভিন্ন সময় বহু কমিশন হয়েছে। কিন্তু সেসব কমিশনের ফলাফল শূন্য। অর্থাৎ কোন কমিশন হিন্দু সমাজের কোন কাজে আসেনাই। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সারাদেশে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে হিন্দুদের উপর ব্যাপকভাবে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। বিএনপি-জামাত জোট সরকার সে ঘটনার কোন বিচার না করায় ২০০৯ সালে মহামান্য হাইকোর্ট বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুন্নুকে চেয়ারম্যান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করে। কমিশন একটি রিপোর্টও পেশ করে; ঐ পর্যন্তই। সে রিপোর্ট মোতাবেক সে ঘটনার বিচার হয়নাই। মূলতঃ ঐক্য পরিষদের গুটিকয়েক নেতা সমগ্র হিন্দু জাতিকে ভিকটিম হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের সুযোগ সুবিধা আদায় করছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তাগণ আশা প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু দেশের হিন্দু সম্প্রদায় স্বাধীনতার আগে থেকেই নিঃস্বার্থ ও একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনে সহযোগিতা করে আসছে, সে কারণে বর্তমান সরকার আগামী সংসদে হিন্দু সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবী, “জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিল উত্থাপন করবে ও পাশ করবে। কিন্তু বর্তমান সরকার যদি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না করে তাহলে আগামী নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায় ভোট বর্জনের মত কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।