নিজস্ব প্রতিবেদক: দারিদ্রোর অন্ধকারে নারীরাও ফুল ফুটাতে পারে। তারই বাস্তবচিত্র সুই সুতা, ফ্যাশন ডিজাইন, ফুড প্রসেসিং আর ব্লকবাটিক পাল্টে দিচ্ছে যমুনা পারের নারীর জীবন। এ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সিরাজগঞ্জের চৌহালীর অনেক মহিলারা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এ বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। নারী জাগরণ ও নারী মুত্তির সংগ্রামে অন্যন্যা ভুমিকা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বলেছিলেন-এ পঙ্গক্তিগুলো ।
বেগম রোকেয়া নারী জাগরণে ও নারী মুক্তির সংগ্রামের কথা না বললে নয়। কবিদের কথায় যথেষ্ঠ যুক্তি প্রমান দ্বারা সমাজের চোখে আঙ্গল দিয়ে দেখালেও সমাজ এ সব মানতে চায়না। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে নারী পুরুষ সমান পরিশ্রম করে জীবনের ধারা ও পরিবেশ সব কিছু বদলে দিয়েছেন। কিন্তু নারীর সে অবদান পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ মানতে নারাচ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে এখনো তার সঠিক মর্যদা দেয়নি। মেয়েরা পদে পদে অবহেলার শিকার। যত কষ্ট দুঃখ ও যন্ত্রনা বুকে নিয়ে কেউ চলে যায় নাফেরার দেশে, কেউ বা হয়ে ওঠে বিদ্রোহী । এখন নারী নিজের দক্ষতা আর পরিশ্রমকে পুজি করে সমাজে মাথা উচু করে তারা বাচার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পুরুষ যেখানে নির্ভাক, সেখানেই নারীদের সাফল্য।স্বীকার না করলেও করার কিছুই নেই। যে যা প্রাপ্ত তাকে তা দেয়া প্রয়োজন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে বেড়িয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে নিজের পরিশ্রমে সৎপথে উপারর্জন করে সমাজে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে বাংলার নারীরা। দারিদ্রোর অন্ধকারে নারীরাও ফুল ফুটাতে পারে। তারই বাস্তবচিত্র সুই সুতা, ফ্যাশন ডিজাইন, ফুট প্রসেসিং আর ব্লকবাটিক পাল্টে দিচ্ছে যমুনা পারের নারীর জীবন।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার নানান পেশার নারীরা নিজের মুক্তির সংগ্রামে সৎপথে পরিশ্রম করে জুরি পুতি, সুই-সুতা, ব্লকবাটিক,ফ্যাশন ডিজাইন,ফুড প্রসেসিং ও সেলাইয়ের কাজ করে (শিখে) ভাগ্য পরিবর্তন করতে চলেছেন উপজেলার নারীরা। সংসারের কাজের ফাকে হাতের কাজ করে স্বাবলম্বী হতে চৌহালীর যমুনা পারের অনেক নারী ক্ষুদ্র কুটি শিল্পের কাজে এগিয়ে এসেছেন। তারা নিপুন হাতে ফ্যাশন ডিজাইন আর সুইসুতা দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের পোষাক। এর সাথে যোগ হয়েছে ফুড প্রসেসিং। কেউ সংসারের কাজের ফাকে কেউ লেখাপড়ার পাশাপাশি কেউ বা বেচে থাকার তাগিদে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয় বর্ধক (আইজিএ) প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অনেকেই।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫০জন (দু-গ্রুপে)নানা পেশার নারীরা হাতের কাজ করছে যার বাস্তবচিত্র সরেজমিন। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার অন্যতম আইজিএ প্রকল্প থেকে
কাজ করে সংসারের অভাব ঘোচাচ্ছেন সংগ্রামি নারীরা।
শুধু তাই নয়-অর্থ-অভাবে যেসব শিক্ষার্থী লেখপড়া করতে পারছেন না বা পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তারাও যুক্ত হয়েছে এ কাজে। স্বামী হারা স্বামী পরিত্যাক্তা ও ভিধবা নারীরা জীবনের চাকা ঘোড়াতে নেমে এসেছেন হাতের কাজে। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে এ কাজে। এ কাজে সার্বিক তদারকিসহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের জোগান দিচ্ছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর চৌহালী।
প্রশিক্ষন নিচ্ছেন খাষকাউলিয়া গ্রামের ২ সন্তানের জননী স্বামী পরিত্যক্ত নাছিমা খাতুন, মুরাদপুরের মৃত ইসমাইল এর স্রী ফাতেমা,রেহাই পুকুরিয়া গ্রামের আমজাদ খন্দকারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সাথী আক্তার, জোতপারার জয়নালের কলেজ পড়ুয়া কন্যা সুমা খাতুন, কোদালিয়া গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত কলেজ পড়ুয়া রুনা আকতার, মরিয়ম সালেহাসহ সকলেরই দাবি সরকার আমাদের অর্থের যোগান দিলে পুরুষের সাথে পাল্লা দিযে সংসারের চাকা ঘোড়াতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
সংগ্রামী যমুনা পারের নারী নাছিমা খাতুন বলেন, আমি স্বামী পরিত্যক্তা, অভাবের সাথে যুদ্ধ করে দল নেত্রী হয়ে সমাজে অনেক উন্নয়ন মুলক কাজ করে মেয়েকে শিক্ষিত ও নিজের পায়ে দাড়িয়েছি এবং জয়িতার খেতাব পেয়েছি। মন আছে অর্থ নেই তাই অর্থসহ সুযোগ সবিধা দিলে নিশ্চিত আমারা আরও এগিয়ে যেতে পারবো।
এ প্রকল্পের(আইজিএ) নিয়োগ প্রাপ্ত ফ্যাশন ডিজাইনার (টেইনার) মোছাঃ
আলমাস ইয়াসমিন খানম বলেন, ইতিমধ্যেই অনেক নারী কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন অনেকেই কাজ শিখতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফুড প্রসেসিং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষক রাজিয়া সুলতানা বলেন, প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামের নারীরা এগিয়ে চলছে, তারই অংশ হিসাবে হাতে কাজ শিখে সংসারের হাল ধরেছেন। তিন মাসের এ কোর্চে ভর্তি হয়ে ফুড প্রসেসিংএ কাজ শিখে নিজের পায়ে দাড়াতে চান চৌহালীর ভাঙ্গা গড়া নদী পারের নারীরা।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শামীম জাহিদ তালুকদার বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দেশ এগিয়ে চলছে এক জন মানুষও বেকার থাকবে না। তাই পুরুষের ন্যায় নারীদের স্বালম্বী করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম আয়বর্ধক আইজিএ প্রকল্প চালু করেছে। শহরের ন্যায় গ্রাম-গঞ্জের নানা শ্রেণীর নারীদের প্রশিক্ষন দিয়ে নিজের পায়ে দাড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার। এখন ১৩তম আয়বর্ধক প্রশিক্ষন ব্যাচ চলছে। যারা অসহায় তাদেরকে সরকার বিনামূল্যে সেলাই মেশিন দিচ্ছেন, তারা এপ্রকল্পের আওতায় ফ্যশন ডিজাইন আর ফুড প্রসেসিং থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে গ্রামের মহিলারা স্বাবলম্বী হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অত্র প্রকল্পের সভাপতি আফসানা ইয়াসমিন জানান, সরকার নারীর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন, তারই ধারাবাহিকতায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতি গ্রুপে ২৫জন করে ৩ মাসের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। শহরের ন্যায় গ্রামকে ডিজিটাল করতে সরকার আয়বর্ধক প্রজেক্টটি চলমান। নারী মুক্তি সংগ্রামে অংশ হিসাবে গ্রামের মহিলারা এখান থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে নিজে (হাতে কাজ করে) সংসারে অর্থের যোগান দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবেন ইনশাআল্লাহ ।