চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের সুন্দরপুর-নবাবজায়গীর এলাকায় ৮ নম্বর বেড়িবাঁধে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজের অনিয়মের অভিযোগে প্রকল্প ম্যানেজার আব্দুল মমিন শাহিন আলীকে আহত করেছে এলাকাবাসী। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
জানা যায়, গত ৩ মার্চ থেকে সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের নবাবজায়গীর এলাকায় ৮ নম্বর বেড়িবাঁধে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই ১৪নং সুন্দরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান নেতৃত্বে প্রতিটা ভরাটের গাড়ি থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা নেয়াসহ নানান অভিযোগে স্থানীয় জনগণ অনিয়ম বুঝতে পেরে দুই তিনবার বন্ধ করে দেয় প্রকল্পের কাজ।
অভিযোগ উঠেছে, গত মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় প্রকল্প ম্যানেজার আব্দুল মমিন শাহিন আলী স্থানীয় জনগণের হুমকির মুখোমুখি হয়েও প্রকল্পের কাজটি জোরপূর্বক আবার শুরু করেন। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় জনগণ আবারও কজ বন্ধ করতে আসলে প্রকল্প ম্যানেজার শাহিনের নেতৃত্বে প্রকল্পের ১৫-১৬ জনের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয় এবং সেই হাতাহাতিতে প্রকল্পের ম্যানেজার আব্দুল মমিন শাহিন আলীকে গুরুতর আহত করে স্থানীয় জনগণ। আহত ম্যানেজার শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের চর ঘোড়াপাখিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে।
এ ঘটনায় আহত ম্যানেজার আব্দুল মমিন শাহিন আলীকে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত বুধবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের কাছে জানা গেছে, বড় মরাপাগলা গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে নয়ন আলী ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে চাপ দিয়ে আসছিল। তার কাছে বেড়িবাঁধের শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিল। এমন অবস্থায় নয়ন আলী ১০-১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে এসে বাঁধ এলাকায় একটি ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে প্রকল্পের ম্যানেজারকে লোহার রড দিয়ে মাথা ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে গুরুতর আহত করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তার ব্যাগে থাকা ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
গত বুধবার রাতে সদর মডেল থানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার মো. জামাল উদ্দিন নাসের বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ ও ৩ থেকে ৪ জনকে অজ্ঞাত করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক নয়ন আলী (২৮), সেরাজুল ইসলামের ছেলে মোঃ কাদির (২২), শাহজাহান আলীর ছেলে মোঃ সামিউল ইসলাম (২৫) ও ইব্রাহিম হোসেনকে।
মামলার বাদী জামাল উদ্দিন নাসের বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে বিভিন্নভাবে জানান, কখনো ১০ লাখ কখনো ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন নয়ন আলী। চাঁদা না দেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্বশত্রুতার জেরে ১৪নং সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাবিবুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক মোঃ নয়নকে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দেয় ও উক্ত ঘটনার ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪নং সুন্দরপুর ইউনিয়নের একজন বলেন, প্রায়ই ক্ষমতার জোর দেখিয়ে নানান কাজে প্রকল্পে চাঁদাবাজি অনিয়ম করে আসছেন। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান তার বিষয়ে কোনো অভিযোগ দিতে গেলে তার রাস্তা থেকে অভিযোগকারীকে সরিয়ে দেন। তাই কেউ প্রাণের ভয়ে তার বিষয় কোন অভিযোগ করতে যায় না। আমাদের ইউনিয়নবাসী আজ অনেক অসহায়।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত ৮ মার্চ বুধবার রাতে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৩ থেকে ৪ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আসামি ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে ১নং আসামি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক মোঃ নয়ন মুঠোফোনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ২০২১ সালের দিকে সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের কারণে তার বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। আমার প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরপুর ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ সাড়া দিয়েছিল এবং সুন্দরপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সাতজন জেলা প্রশাসক বরাবর একটা ৪ কোটি টাকার মামলা দায়ের করেছিল। সেই থেকেই তার সাথে আমাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। তারপর থেকে তিনি আমাকে স্থানীয়ভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছেন এবং সেটাও করতে না পেরে এখন মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করানো হচ্ছে। বেড়িবাঁধের ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমাকে আমাকে অযথা ফাঁসানো হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুজ্জামানকে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। বিষয়টা নিয়ে আমি খুব দুশ্চিন্তায় ভুগছি। এখানে আমাকে পুরোপুরি ফাঁসানো হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আমি ছাত্র রাজনীতিতে অনেক সক্রিয় হয়ে ওঠায় আমার বিরোধী লোকজন আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে এবং আমায় নিচে নামাবার জন্য অনেক চেষ্টা করছে। আমি রাজনীতিতে প্রতিহিংসা নয় প্রতিযোগিতা করতে চাই।