চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে চরসলিমাবাদ মুসলিমিয়া দাখিল মাদরাসার প্রায় তিন শত ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নীচে, গাছতলায় ও ছোট একটা ভাড়া করা দোকান ঘরে। শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন যার বাস্তবচিত্র সরেজমিন।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন সময়ে চৌহালীতে শিক্ষার জন্য তেমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তখন এই উপজেলায় পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর বিশাল গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এবং নিরক্ষর মুক্ত দেশ গড়ার ব্রত নিয়ে এলাকার দানবীর ও শিক্ষা গুরুদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গ্রামে ১৯৯৬ সালে চরসলিমাবাদ মুসলিমিয়া দাখিল মাদরাসা নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। সাজানো গোছানো সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি যমুনার ভয়াল থাবায় স্রোতের সাথে মিশে যায় গত বর্ষায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম থমকে যায়। তারপর বিনানই গ্রামের একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঘরে পর্যাপ্ত জায়গা না হওয়ায় গাছতলা ও খোলা মাঠেও ক্লাস পরিচালনা করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিনানই বাজারের একটি ছোট দোকানঘর ভাড়া নিয়ে অফিস কার্যক্রম চলছে আর ঘরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে ও কষ্ট লাঘবে প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী ভবন নির্মাণের দাবি করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
১০ম শ্রেণির ছাত্রী মোছাঃ জুলেখা খাতুন বলেন, আমরা লেখাপড়া করে ভালো মানুষ হতে চাই। তাই আমাদের মাদরাসার জন্য জমি ও স্থায়ী ভবন চাই। পাশাপাশি চৌহালীর সবচেয়ে বড় সমস্যা নদী ভাঙন থেকে মুক্তি চাই। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
সহকারী শিক্ষক ফকির শরিফ উদ্দিন বলেন, কঠিন সঙ্কটে আছি আমরা। না আছে নিজস্ব জমি ও ঘর, না আছে বিদ্যুৎ, টিউবয়েল, বাথরুম। সবকিছু মিলিয়ে আমরা অর্থসঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছি। মাদরাসাটি ১৯৯৬ সালে চরসলিমাবাদ গ্রামে স্থাপন করা হয়। ২০১৬ সালে প্রথম নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়লে এ গ্রামের পূর্ব সীমানায় উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে আবারও নদী ভাঙ্গনে মাদরাসাটি তলিয়ে যায়। এখন বিনানই বাজারের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।
মাদরাসার সুপারিনটেন্ডেন্ট আলহাজ্ব মাওলানা শহিদুল ইসলাম জানান, সাজানো গোছানো পরিপাটি মাদরাসা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে ২ বার। শিক্ষাবান্ধব সরকারের ভিশন ও মানোন্নয়নের যুগে জমি ও ঘর শুন্য হয়ে অন্যের দোকান ঘর ভাড়া করে পাঠদান সচল রাখতে হচ্ছে আমাদের। অর্থ সঙ্কটে নিজ গতিতে দাঁড়াতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি সচল রাখতে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজর একান্ত প্রয়োজন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এম এ আরিফ সরকার বলেন, শুনেছি ২০১৬ সালে প্রথম নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়লে এ গ্রামের পূর্ব সীমানায় উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে আবারও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মাদরাসাটি। ম্যানেজিং কমিটি যেখানে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করতে চাইবে আমাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।