গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : ২০১৫ সালে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই মেশিন ক্রয় করা হয়। যন্ত্রটি চালুু করার মাত্র ৮ মাস পরেই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লেক্সিকন নিম্নমানের যন্ত্র সরবরাহ করার কারণেই বিভিন্ন টেকনিক্যাল সমস্যায় পরিপূর্ণ এই মেশিনটি।
৬ বছর পেরিয়ে গেলেও মেরামত করা হয়নি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এই এমআরআই মেশিন। ফলে গোপালগঞ্জ, নড়াইল, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের আশেপাশের কয়েকটি জেলা থেকে সেবা নিতে আসা রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন নিউরোলজিক্যাল চিকিৎসা সেবা থেকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে দীর্ঘদিন যাবৎ হিলিয়াম গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় আমরা এমআরআই মেশিন দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে পারছি না। গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেষ বিশ^াস জানান, হিলিয়াম গ্যাসের সরবরাহ চেয়ে এবং হাসপাতালের সংযুক্ত তালিকার হাইটেক যন্ত্রপাতিসমূহ মেরামতের লক্ষ্যে চীফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার, নিমিউ এন্ড টিসি, মহাখালি বরাবর একাধিক আবেদন করেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি এমআরআই মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরবরাহ করতে পারেনি কোন দক্ষ টেকনিশিয়ান। ফলে অধিকাংশ সময়ই এ মূল্যবান চিকিৎসা যন্ত্রটি অকেজো অবস্থায় পড়ে ছিল। অন্যদিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের একমাত্র সিটিস্ক্যান মেশিন সার্ভিসিংয়ের চুক্তি হয় ফিলিপস ইলেক্ট্রনিকসের সাথে। বাৎসরিক পঞ্চাশ লক্ষ টাকা সার্ভিসিং বিল প্রদানের কথা থাকলেও গত তিন বছরে ফিলিপস ইলেক্ট্রনিকসের দেড় কোটি টাকা পাওনা বকেয়া রয়েছে। যার ফলে ফিলিপস ইলেক্ট্রনিকস তাদের সার্ভিসিং সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।
হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৫ সালে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এমআরআই যন্ত্র, ২০১৩ সালে ১০ কোটি ৬৬ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে সিটিস্ক্যান যন্ত্র এবং ২০১৪ সালে ১০ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন ক্রয় করা হয়। এসব মূল্যবান চিকিৎসা যন্ত্র সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হলো লেক্সিকন। বিভিন্ন সময় সফটওয়্যার নষ্ট হয়ে যাওয়া, হিলিয়াম গ্যাসের সরবরাহ না থাকা এবং যথাসময়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সার্ভিসিং সেবা না পাওয়ায় সাধারণ রোগীরা উক্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ সুযোগে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার উচ্চমূল্যে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ রোগীর হাজার হাজার টাকা।
গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের মূল্যবান মেডিকেল ইকুইপমেন্ট কার্যকর করার লক্ষ্যে আমার দপ্তরের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেষ বিশ^াস জানান, এমআরআই মেশিন দিয়ে চিকিৎসা কার্য না চালাতে পারলেও যান্ত্রিক কারণে মেশিনটির বিদ্যুৎ সংযোগ সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হয়। প্রতি মাসে যার বিদ্যুৎ বিল আসে একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে দুই লক্ষ টাকা এবং এই মেশিন চালু করে সঠিক রোগ নির্ণয় করা আর সম্ভব নয়। তাই মেইনটেনেন্স কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রাখতে বলেছি উক্ত এমআরআই মেশিনটির। তবে আশার কথা হলো সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নতুন অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থ অনুমোদন সাপেক্ষে নতুন এমআরআই মেশিন সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে।