এস এম সাব্বির, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের বেশিরভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবার সুযোগ পাচ্ছেনা জনগণ। প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সেবায় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। নানা অনিয়মের মধ্যে চলছে ক্লিনিকের কার্যক্রম। অপ্রশিক্ষিত কর্মীদের দিয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণে রয়েছে আস্থার সংকট। সেবা প্রার্থীদের ক্লিনিকমুখী করতে যোগাযোগ ও প্রচার প্রচারণামূলক কার্যক্রম নেই। ফলে জেলায় জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত কর্মসূচীটি বাস্তবায়নে ভাটা পড়েছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ক্লিনিক সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানা গেছে, সাধারন রোগ, শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃস্বাস্থ্য, সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ, পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান ও জনগোষ্ঠীর আচরণিক পরিবর্তনে কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছেনা। অনুমানের ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে মানুষের জীবন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ জন চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেও সেবা নিতে আসা গর্ভবতী মা’দের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ক্লিনিকে গোপনীয়তা রক্ষার পরিবেশ না থাকায় গর্ভবতী মায়েরা ক্লিনিকে রুটিং চেক আপ করতে আসতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননা। এছাড়া কিছু কিছু ক্লিনিকে পুরুষ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) কাছ থেকে গর্ভকালীন সেবা নিতে তাদের আগ্রহ কম।
নিরাপদ প্রসবের কোন ব্যবস্থা ক্লিনিকে নেই। প্রসব পরবর্তী চেক আপের জন্য মায়েরা তেমন একটা ক্লিনিকে আসেন না। পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিতে আসা মা’দের কন্ট্রসেফটিভ হিসেবে কেবল ওর্যাল পিল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ডায়রিয়া ও নিমোউনিয়া আক্রান্ত শিশুদের পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া যে চিকৎসা দেওয়া হয়-তা অনেকটা অনুমানভিত্তিক।
এইসব ক্লিনিকে রেফারেল স্লিপ ব্যবহার করা হলেও রেফারেল লিংকেজগুলোর সাথে সেবা প্রদানকারী ও প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কের ফারাক রয়েছে। ফলে রেফারেল লিংকেজ অনেকটা কার্যকর নেই বললেই চলে।
পরিবার পরিকল্পনা সেবার ক্ষেত্রে জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করা হয় না। ক্লিনিকে পুরুষরা কম আসেন। ফলো আপ ভিজিটের জন্য কাউন্সিলিং না থাকায় মানুষ ক্লিনিকমুখী হতে পারেনি। রোগী ড্রপ আউটের সংখ্যা বেশী।
পাশাপাশি জনগোষ্ঠীর আচরণিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিহ্যাভিয়ার্যাল চেঞ্জ এ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিসিসি) কার্যক্রম না থাকায় ক্লিনিকে ফ্লোটিং সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বেশী। যারা সেবা নিতে আসেন তারা সাধারন রোগ বিশেষ করে জ্বর সর্দি কাশির চিকিৎসার জন্য আসেন।
গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল সংকট, প্রশিক্ষণ, তদারকি ও সমন্বয়হীনতার অভাবে ক্লিনিকগুলো থেকে প্রত্যাশিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষরা দোরগোড়ায় বসে কমপক্ষে প্রাথমিক পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা পাবে।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, ক্লিনিকগুলোকে গণমুখী করতে সরকারের পলিসি লেবেলে কাজ চলছে। গুনগত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।