আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরাইল কোনো বাধা দিতে পারবে না এবং ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে। খবর সিএনএন’র।
এ রায় আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও আইসিজে জানিয়েছে, এর রয়েছে “বড় ধরনের আইনি ও নৈতিক গুরুত্ব।” তবে ইসরাইল তা সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রায়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “আমি আশা করি, ইসরাইল রায়টি মেনে চলবে।”
আইসিজের সভাপতি ইউজি ইওয়াসাওয়া জানিয়েছেন, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ কার্যক্রম সহজ করতে ইসরাইল বাধ্য।
আইসিজে মনে করিয়েছে, ইসরাইলের অভিযোগের বিপরীতে, ইউএনআরডব্লিউএ (ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা) যুদ্ধের সাথে কোনো সম্পর্ক প্রমাণ করা যায়নি।
আদালত বলেছে, ইসরাইল এই সংস্থার ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দিতে পারবে না। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রায় প্রত্যাখ্যান করে সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, “আইসিজের পরামর্শমূলক রায় আন্তর্জাতিক আইনের আড়ালে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা।”
তবে আদালত ইসরাইলের অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে যে, আইসিজের কার্যক্রমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নরওয়ে জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করবে যাতে ইসরাইল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়।
ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি আম্মার হিজাজি বলেন, “এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে যাতে রায় বাস্তবায়িত হয়।”
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ১০ অক্টোবর থেকে গাজায় ৫৩০টি ট্রাক প্রবেশ করেছে, যার মধ্যে ৬,৭০০ টনের বেশি খাদ্য রয়েছে, যা প্রায় ৫ লাখ মানুষের দুই সপ্তাহের খাবার যোগায়।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৭৫০ টন খাদ্য প্রবেশ করছে, যা তাদের দৈনিক লক্ষ্য ২ হাজার টনের তুলনায় কম।
আইসিজে মনে করিয়ে দিয়েছে, ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। আদালত স্পষ্ট করেছে, ইসরাইল একটি দখলদার শক্তি হিসেবে স্থানীয় জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বাধ্য এবং কোনোভাবেই সহায়তায় বাধা দিতে পারবে না।
এর আগে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আইসিজে বলেছিল, ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইসরাইলের দখল অবৈধ এবং তা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে। বর্তমানে আইসিজে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা আরেকটি মামলা বিবেচনা করছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলের কর্মকান্ড ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে।
এদিকে, হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।