ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভার দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলাম টিপু ও জরিনা বেগম দম্পতির ছেলে জাহিদ হাসান জনি (১৮) রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে এবার এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৩৮০১তম হয়ে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। জনি রংপুর মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এ ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের মধ্যে সে ৭২ নম্বর পেয়েছে।
গত রোববার প্রকাশিত ফলাফলে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন জনি।
এ বিষয়ে জাহিদ হাসান জনি বলেন, অদম্য ইচ্ছাশক্তিই আমাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে। শিক্ষা জীবনজুড়েই আমি আর্থিক অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ছেলে ডাক্তার হবে। স্কুলে পড়া অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হয় বাবাকে। বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিজের সবটুকু দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাই আমি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। তখন থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয় আমাকে। কৃষিকাজ করে সংসারের সকল খরচ জুগিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ছিল বেশ কষ্টকর। তবে সব কষ্ট মানিয়ে নিয়ে বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি।
বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়ির সব দায়িত্ব তাকে নিতে হয়। নিজেই কৃষিকাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন ছিল, তবুও হাল ছাড়েনি। কারণ স্বপ্নটা আমার বাবার। জনি বলে, “আজ মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কেবল পথচলা শুরু। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে করে একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ দেশবাসীর সেবা করতে পারি।”
এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সামান্য টাকায় রংপুর কোচিংয়ে ভর্তি হয় জনি। তারপর বাড়িতে এসে কাজ করে আবার চলে যেত সে। পরিশ্রম আর মেধার জোরেই সে তার সব বাঁধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।
এ বিষয়ে জনির মা জরিনা বেগম বলেন, তাদের জমজ ২ সন্তানের মধ্যে জনি বড়। বোনটা ছোট। তাদের বাড়ির বসতভিটা আর মাঠে কয়েক শতক আবাদি জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। জনি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। সে কৃষিকাজ করে সংসারটা চালাতো। আজ ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। জনি ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। ছোট থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন পূরণের জন্য সে কঠোর পরিশ্রম করেছে।
তিনি আরও বলেন, জনিকে কোনো সময় একটা ভাল পোশাক কিনে দিতে পারিনি। যা দিয়েছি তাতেই সে সন্তুষ্ট থেকেছে।
এ বিষয়ে প্রতিবেশি সুজন বলেন, বাবাকে হারানোর পর ছেলেটা খুব কষ্ট করেছে। মাঠে কৃষিকাজ করে সংসারের খরচ ও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। জনি অত্যন্ত মেধাবী ছেলে। সে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা তার জন্য গর্বিত।
রাণীশংকৈল পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, তার বাবা মারা যাওয়ার পর জনি অনেক পরিশ্রম করেছে। আজ সে সফল হয়েছে। মাঝেমধ্যে আমি তাদের খোঁজখবর নেই। পরবর্তীতে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, বিষয়টি যেমনিভাবে কষ্টের তেমনি অনুপ্রেরণার। পড়াশোনার ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনো উপায়ে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। জনি সেটাই প্রমাণ করেছে। রাণীশংকৈল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং আমার ব্যক্তিগত থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।