কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় পানের দাম কম পাওয়ায় হতাশায় রয়েছে চাষিরা। পান চাষের মূল উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়া, বিদেশে রপ্তানি করা এসব পানে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ধরায় রপ্তানি বন্ধ এবং দেশের অভ্যন্তরেও পানের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সপ্তাহে দিন ভাগ হয়ে বসে পানের হাট। এর মধ্যে বিত্তিপাড়া বাজারে বড় হাট বসে রোববার ও বৃহস্পতিবার। এ হাটে বছরখানেক আগেও পান গুনে টাকা নিতেন কৃষক। তখন বেশ সচ্ছল ছিলেন তারা। কিন্তু বিদেশে রপ্তানি করা এসব পানে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ধরায় স্বপ্ন ভেঙেছে কৃষকের। এর ওপর করোনার কারণে ইউরোপে দেশের পানের বাজার বন্ধ। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরেও পানের চাহিদা কমে যাওয়ায় গত এক বছর ধরে দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। অন্যদিকে দাম বেড়েছে পান চাষের মূল উপকরণ খইল ও ওয়াসি। এক বস্তা (৭০ কেজি) খইলের দাম ২০০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৬০০ টাকা, আর এক বান্ডেল (১৬০টি) ওয়াসির দাম আগে ছিল ৩০০ টাকা, এখন তা বেড়ে ৫৫০ টাকা। এসব কারণে পান হাটে তুলে হতাশ চাষিরা। এরই মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিনের পানের বরজ ভেঙে ফেলছেন। কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, ধারাবাহিকভাবে কমেছে পানের দাম। দুই-তিন মাস আগে দাম এতটাই কমে যে পান বিক্রি করে শ্রমিকের খরচও উঠত না। সে সময় সোনাইডাঙ্গা ও হাতিয়া গ্রামের অনেক কৃষক পানের বরজ ভেঙে ফেলেন। মোহাম্মদ নামে আরেক পান চাষি জানান, এখন মধ্যম মানের এক পণ (৮০টি) পান বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, যা অন্য সময়ে বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে। কৃষক ছগির উদ্দিন বলেন, ‘পান বরজ করতে লাখ লাখ টাকা লগ্নি করতে হয়। চাষ করতেও খরচ অনেক। সেই পান বিক্রি করতে গিয়ে লোকসানে পড়ে আমরা শেষ হেয়ে যাচ্ছি।’বিত্তিপাড়া হাটে আসা ব্যাপারী সোহেল রানা জানান, হাট থেকে পান কিনে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে নিয়ে বিক্রি করেন। সেখানে আড়তে আগের মতো পান টানতে চান না আড়তদাররা। দামও ভালো দিতে চান না। সে কারণে তারাও বেশি দামে কিনতে পারছেন না। এর আগে পানে ক্ষতিকর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশ থেকে সাময়িকভাবে পান রপ্তানির ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা দেয়। ধাপে ধাপে তা ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।পরে ইইউ পান রপ্তানিতে কিছু শর্ত দেয়। কিন্তু করোনার কারণে এখনও রপ্তানি শুরু করা যায়নি। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, শুধু সদরেই ৬৭০ হেক্টর জমিতে এবার পানের চাষ হয়েছে। রপ্তানি শুরু করা গেলে এ খাতে আবার সুদিন আসবে। তবে পানে সুদিন আনতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ঋণের কথা জানান চাষিরা।