মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, কুষ্টিয়া প্রতিবেদক:
আর কয়েক মাস পরে আমূল বদলে কুষ্টিয়া শিলাইদহ কুঠিবাড়ির চিত্র। মূল স্থাপনার বাইরে ভারতীয় অর্থে নির্মিত হচ্ছে উন্নতমাতের রেষ্ট হাউজ, আধুনিক লাইব্রেরি ও ক্যাফটরিয়া কাম ডকুমেন্টেশন সেন্টার, আনসার সেড, উন্মুক্ত মঞ্চসহ আরো কয়েকটি কাজ। এসব কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৫ ভাগ। শেষ মুহুর্তের কাজ চলছে। সব কাজ বাস্তবায়ন হলে শিলাইদহ কুঠিবাড়িকে ঘীরের সরকার যে বিশেষ পর্যটন জোন করার উদ্যোগ নিয়েছে তা একধাপ এগিয়ে যাবে। বাড়বে পর্যটকের সংখ্যা ও রাজস্ব আয়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, লালন ফকিরের আঁখড়াবাড়িসহ আরো কয়েকটি স্পটকে ঘীরে বিশেষ পর্যটন নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে পর্যটন মন্ত্রণালয় ও স্থাণীয় জেলা প্রশাসন। এ জন্য পর্র্যটন মন্ত্রণালয় থেকেও বিশেষ বরাদ্দের পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া ভারতের সাবেক রাষ্টপ্রতি প্রণব মুখার্জির দেয়া অর্থে কুঠিবাড়িতে বেশ কিছু অবকাঠামোর কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো বাস্তবান হলে কুঠিবাড়ির চেহারা একেবারেই বদলে। বিশ্বমানের একটি পর্যটননগরি হিসেবে রূপ পাবে শিলাইদহ। তখন পর্যটক বাড়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় দ্বিগুন হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। কুষ্টিয়ায় পর্যটন ও দর্শনীয় স্থানের কথা বলতেই প্রথমে আসে শিলাইদহে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির কথা। জেলার পর্যটন বিকশিত হয়েছে কুঠিবাড়ি ঘিরেই। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে বিপুল সংখ্যাক দর্শনার্থী আসে কুঠিবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা দেখতে। তবে কুঠিবাড়িসহ জেলায় সেসব স্থাপনা আছে সেগুলোতে অবকাঠামোসহ পর্যটকদের সুবিধা-সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে।
বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক ও শিল্পী অধ্যাপক ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতন বলেন, পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার শিলাইদহ সেভাবে বিকশিত হতে পারেনি। সরকারকে পর্যটক বান্ধব সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলেতে হবে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য সুবিধা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করার পাশাপাশি নিরাপদে যাতে সবাই ঘুরতে পারে সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। অনেক সময় উদ্যোগ নেয়া হয়, তবে তা বাস্তবায়ন হয় না। কবির যে কাঁচারি বাড়ি সেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব স্থাপনা দ্রুত সংস্কার করে পর্যটক বান্ধব করে তুলতে হবে। বর্তমানে কুঠিবাড়িতে ভারতীয় অনুদানে বেশ কিছু অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে লাইব্রেরি ভবন কাম ডকুমেন্টেশন সেন্টার, রেষ্ট হাউজ, ক্যাফেটরিয়া, আনসার সেড ও উন্মুক্ত মঞ্চ। এসব অবকাঠামো নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। সব কাজ বাস্তবায়ন শেষে কুঠিবাড়ির সৌন্দর্য্য বাড়ার পাশাপাশি পর্যটকরাও পাবেন বিশেষ সুবিধা। বিশেষ করে এতদিন খাওয়াÑথাকার যে সমস্যা ছিল সেটা কেটে যাবে। পাশাপাশি লাইব্রেরি ও মিউজিয়াম থেকে তারা জানতে পারবে অনেক কিছু। কুঠিবাড়ির যে রংয়ের সাথে মিল রেখে প্রতিটি ভবনের রং করা হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন এসব ভবনগুলো ইতিমধ্যেই সবার নজর কাড়ছে। দ্বিতীয় রেষ্ট হাউজের প্রতিটি কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, নিচের তলায় আছে কনফারেন্স কক্ষ ও ডাইনিং হল।
কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মুখলেছুর রহমান জানান, ‘ভারত সরকারে অনুদানে নির্মিত ভবনের বেশ কয়েকটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাকি কাজও কয়েক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এসব ভবন নির্মাণ শেষে তা পর্যটকদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এতে করে কুঠিবাড়িতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আয় দ্বিগুন হবে। বিশ্বমানের একটি টপর্যটন স্পট হয়ে উঠবে কুঠিবাড়ি। ভারত সরকারের অনুদানের বাইরে পর্যটন মন্ত্রণালয় কুঠিবাড়ির উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এ অর্থ ব্যায় করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। এসব কাজ শুরু হবে অচিরইে। কাজের মধ্যে টয়লেট, সড়ক, বসার বেঞ্চ, ও ছাতা নির্মাণ করা হবে। যাতে দর্শনার্থীরা এসে, রেষ্ট নেয়ার সুযোগ পাই। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই এসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থী সায়েম আহম্মেদ ও মাবিয়া আক্তার বলেন, ‘কুঠিবাড়িতে আগের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। ভারত সরকারের অর্থায়নে যেসব অবকাঠামো হচ্ছে তা বাস্তবায়ন হলে আরো অনেক সুবিধা বাড়বে। এতে করে সবাই আকৃষ্ট হবে।
তারা বলেন, এসবের পাশাপাশি রান্নার জন্য একটি কর্ণার নির্মাণের পাশাপাশি কার পার্কিং ও একটি সাংস্কৃতিক ইন্সিটিটিউট করা হলে সর ধরনের সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানো সম্ভব। রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি নজরুল, লালন ফকির, কাঙ্গাল হরিণাথসহ আরো যারা আছেন তাদের বিষয়টি চর্চা ও গবেষনা বাড়বে।’
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো, আসলাম হোসেন বলেন, কুষ্টিয়ায় পর্যটনের অপার সম্ভবনা রয়েছে। পর্যটনের সব উপাদান রয়েছে এ জেলায়। তাই পরিকল্পনার পাশাপাশি বাস্তবায়ন হলে পর্যটনে অন্য জেলাকে ছাড়িয়ে যাবে কুষ্টিয়া। তাই কুঠিবাড়িতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাউল সম্রাট ফকির লালন, কাঙ্গাল হরিণাথ, মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তভিটা, বিল্পবি বাঘাযতিনসহ আরো যারা মনিষি আছেন তাদেরকে ঘীরে বিশেষ পর্যটন জোন গড়ে তোলা হবে। এ জন্য কিছূ কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, গড়াই নদীর পাড়ে কয়া গ্রামে ইতিমধ্যে একটি ইকো পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। নদীর পাড়ে এ পার্কে অবকাঠামোর উন্নয়ন কিছূ কাজ হয়েছে। বড় পরিসরে কাজ করা গেলে এখানেও ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সংখ্যা বাড়বে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুঠিবাড়িসহ অন্যান্য যে স্পট রয়েছে সেখানে যাতায়াতের সড়ক গুলো চওড়াকরণ করা হবে। এছাড়া পর্যটকরা যাতে সব স্পট ঘুরতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করা হবে। অল্প টাকায় একদিনে যাতে সব স্পট ঘুরতে পারে সে জন্য উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। লালন ফকিরের আঁখড়া ঘীরেও প্রতি বছর দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটক আসে। তবে সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। তাই থাকা ও খাওয়ার জন্য উন্নত আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি রেষ্টুরেন্ট নির্মাণের একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
লালন একাডেমীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক সেলিম হোসেন বলেন, ‘লালন আঁখড়াবাড়ি দেশ ছাড়াও দেশের বাইরের মানুষের কাছে দর্শনীয় স্পট হিসেবে পরিচিত। তবে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না বাড়ায় দর্শনার্থরী এসে হতাশ হন। তবে সরকার থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অবকাঠ মোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি লালন কালচারাল সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাংসদ ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, কুঠিবাড়ির জন্য কুমারখালীর আলাদা পরিচিত রয়েছে সারা বিশ্বে। তাই ভারত সরকারের পাশাপাশি কুঠিবাড়িকে ঘীরে পর্যটন বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কুঠিবাড়ির পাশেই পদ্মা নদী। কুঠিবাড়ি ও পদ্মা নদীকে ঘীরে ইকোপার্ক করা হলে দর্শনার্র্র্র্র্থীরা আরো বেশি উপভোগ করতে পারবে। তাই কুঠিবাড়িকে ঘীরে আরো কি কি পরিকল্পনা করা যায় তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। আশা করছি কয়েক বছরের মধ্যেই সমস্ত কাজ বাস্তবায়ন হবে। পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকেও দর্শনার্থীদেরা যাতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায় তার জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।