কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে প্রতিদিন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অনীহার ফলে শহরে যানজট সমস্যা দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এ জনদুর্ভোগ সমাধানে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জেলা শহরের চলাচলকারী মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলা শহরে চার সড়কের গৌরাঙ্গ বাজার মোড়, কালীবাড়ি মোড়, কাচারি বাজার মোড়, আটারবাড়ী কাচারি মোড়, বড় বাজার জাহাঙ্গীর মোড়, একরামপুর মোড়ের অধিকাংশ জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ অটোরিকশা-সিএনজি স্ট্যান্ড। এ ছাড়া শহরের প্রধান সড়কের মোড়ে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাস-ট্রাক-ট্রাক্টরসহ বড় যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাধা দিচ্ছেন না দায়িত্বে নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশ। ফলে নির্বিঘ্নে শহরে প্রবেশ করছে এসব নিষিদ্ধ ঘোষিত যানবাহন। অন্যদিকে প্রধান সড়কে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক এই যানজট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও শহরের প্রধান সড়কের দু’পাশের প্রায় অর্ধেক জায়গা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দখলে রাখছে দোকানপাটে কেনাকাটায় আসা ক্রেতাদের গাড়ি পার্কিং ও ভাসমান হকারদের অস্থায়ী স্থাপনা-ভ্যানগাড়ি। ফলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে। প্রধান সড়কের দু’পাশের ভবন, মার্কেট, দোকানপাটের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের বৃহৎ জায়গা গাড়ি পার্কিং এ ব্যবহার হচ্ছে। পার্কিং ব্যবস্থাবিহীন এ সব মার্কেট, ভবন নির্মাণের আইন না মেনেই অনুমোদন দিচ্ছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম গৌরাঙ্গ বাজার মোড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। তিনটি সড়ক থেকে আসা বিভিন্ন যান মোড়ে ইচ্ছে মতো দাঁড়িয়ে থাকা ও কেউ কাউকে সাইড না দেয়ার ফলে শহরের সবচেয়ে বড় যানজট সৃষ্টি হয়। এই মোড়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশের উদাসীনতা ও অদক্ষতাই হচ্ছে সৃষ্ট যানজটের প্রধান কারণ। প্রায় তিন ঘণ্টা অসহনীয় ভোগান্তি দিয়ে বেলা ৩ টায় সড়কটি যানজটমুক্ত হয়। একই সময়ে আরেকটি ব্যস্ততম সড়কের নিউ মার্কেট, তেরিপট্টি মোড়সহ বড় বাজার অংশে বিশাল যানজটের একমাত্র কারণ ঈশা খাঁ রোডের মধ্যবর্তীস্থান আটারবাড়ী কাচারি মোড়ের অবৈধ অটোরিক্সা স্ট্যান্ড। এই মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিক্সার কারণে তিনটি সড়ক থেকে আসা বিভিন্ন যান ও পথচারীর চলাচলের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে শুরু হয় বিশাল যানজট। এ মোড়ের যানজটে প্রায় ঘণ্টার অধিক সময় আটকে থাকতে হয়। অপরদিকে বত্রিশ বাসস্ট্যান্ড সড়ক, ধান মহল সড়ক, মোরগ মহল সড়কের সংযোগস্থল বড়বাজার জাহাঙ্গীর মোড়। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মোড়ে থেমে থেমে যানজট লেগেই থাকে। এ মোড়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে আছে অবৈধ অটোরিক্সা স্ট্যান্ড। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ে নিষিদ্ধ থাকা বড় আকারের যানবাহনের প্রবেশ করলে মারাত্মক আকার ধারণ করে এ মোড়ের যানজট। এদিকে শহরের অন্যতম প্রধান সড়কের কালীবাড়ী মোড় হয়ে ডিসি অফিস, জেলা জজকোর্ট, এসপি অফিসসহ শহরের সবক’টি গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যেতে হয়। কিন্তু সকাল ১০টা পর থেকে এই মোড়ের তীব্র যানজটের কারণে বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমার কাজে আসা লোকজন সঠিক সময়ে জজকোর্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিসে পৌঁছতে পারে না। এ ছাড়াও এই মোড়ে বিপরীতে থাকা আখড়াবাজার মোড়ে চারদিকের সড়ক থেকে বিভিন্ন যান এসে থমকে যায় মোড় দখলে থাকা অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ডের কারণে। এখানেও প্রতিদিন প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আটকে থাকতে হয় যানজটে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হয়। উল্লিখিত সমস্যার কারণে প্রতিদিনের শহরে কাজ করতে আসা মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে থাকে যানজটে। বিশেষ করে যানজটে কারণে স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছতে মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়েন। শহরে বাজার করতে গিয়ে তরুণ-যুবক-বৃদ্ধা সবাই যানজটের কবলে পড়েন। ফলে অনেকেই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে বের হতে চান না। প্রতিদিনের এ যানজটে কবলে চলাচলের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ। যানজটের চিত্র এতটাই ভয়াবহ যে, ভবিষ্যতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে কিশোরগঞ্জ জেলা শহর। এ জনদুর্ভোগের বিষয়ে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, যানজটের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, এটি সমাধানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শহরের প্রধান সড়ক ও মোড় দখলে থাকা অবৈধ অটোরিক্সা স্ট্যান্ড ও ভাসমান হকার অপসারণে শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। এছাড়াও শহরে সীমিত সংখ্যক নিবন্ধিত অটোরিক্সা চলাচল করবে। এছাড়াও শহরের বাহিরে বা প্রবেশমুখে ১৩ টি অটোরিক্সা স্ট্যান্ড স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ।