কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জ জেলা বোরো ধানের উৎকৃষ্ট ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। জেলার প্রতিটি উপজেলায় তীব্র শীত উপেক্ষা করেই চলছে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন। এবার জেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে আবাদ হবে ১ লাখ ২ হাজার ৫’শ হেক্টর ও হাওর বহির্ভূত এলাকায় আবাদ হবে ৬১ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে। এবার হাইব্রিড, উফশী, স্থানীয় বোরো জাতের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৭৪ হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার হাওরাঞ্চলে এবার উফশী জাত আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর, হাইব্রিড জাত আবাদ ২২ হাজার ১১০ হেক্টর ও স্থানীয় জাত আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫১০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া হাওর বহির্ভূত এলাকায় উফশী জাত আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ১৫০ হেক্টর, হাইব্রিড জাত ২০ হাজার ৭২০ হেক্টর ও স্থানীয় জাত আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১৫ হেক্টর জমিতে। হাওরাঞ্চলে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৯৬ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। হাওর বহির্ভূত এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়ে গেছে। দেশের সর্বত্রই চলছে কনকনে শীত। এ তীব্র শীতের মাঝেই হিম শীতল পানি আর কাদামাটির জমিতে ভোর সকালেই নেমে যাচ্ছে কৃষকেরা। বীজতলার ধানের চারা উঠিয়ে এনে রোপন করছেন জমিতে। তবে এবার হাওরে কৃষকেরা শ্রমিক সংকটের কারণে বিপাকে। হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়াতে সিংহভাগ লোকজন তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, বাড়ির পাশে দোকানপাট ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন অতীতে ফসলের মাঠে কাজ করা লোকজন। অতীতের তুলনায় নতুন পেশাতে অর্ধেক শ্রমে উপার্জন হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। এর ফলে তারা জমির কাছে ফিরে যেতে নারাজ। হাওরের কোন কোন জায়গায় শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি দিতে হচ্ছে ৭ শত থেকে ৮ শত টাকা। আধাবেলা কাজে এই পরিমাণ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষিবিভাগের উদ্যোগে কৃষি যান্ত্রিকীরণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে হাওর কৃষকদের। জমিতে চারা রোপন থেকে ধান কাটা ও মাড়াই এসকল কাজেই আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। শ্রমিক সংকটের কারণে জেলার দুই-তৃতীয়াংশ ধান উৎপাদন ব্যাহত হলে এর প্রভাব সামগ্রিকভাবে সারাদেশের মধ্যেই পড়বে। এলক্ষ্যে সরকারও কৃষি রক্ষায় এবং কৃষিখাত লাভজনক করতে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে প্রায় ৭০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে।