গোলাম মোস্তফা সাফু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জেলা কমিটির নিকট দাখিল করা হয়েছে। দাখিলকৃত ওই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান করে নিয়েছেন নৌকা বিরোধী এমন গুঞ্জনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন দলের ত্যাগী পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। গত সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন এবং সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে নৌকা বিরোধীরা কমিটিতে স্থান করে নিচ্ছেন বলে জানান একাধিক নেতাকর্মী। অভিযোগ রয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত নেতার স্বজনরাও রয়েছেন সদ্য দাখিলকৃত এ কমিটিতে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীও ওই কমিটিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের মেয়ে, ভাই ও স্বজনরা প্রস্তাবিত কমিটিতে ঠাঁই পেলেও অনেক ত্যাগী নেতার স্থান হয়নি সেই কমিটিতে। এতে এই কমিটি পরিবারতন্ত্র কমিটি বলে আখ্যায়িত করেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় সংগঠনের জেলা কমিটির নেতারা সভাপতি পদে আসলাম ইকবাল মিলন ও সাধারণ সম্পাদক পদে এ্যাডভোকেট এ এস এম আজাদুর রহমান এবং সহ সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক পদসহ ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। সম্মেলনের প্রায় দেড় বছর পর কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি চুড়ান্ত করে ১২ এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলা কমিটিতে দাখিল করা হয়। ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কাছে জমা দিয়েছেন উপজেলা নেতৃবৃন্দ। জেলায় দাখিলকৃত কমিটির বিষয়টি জানাজানি হলে নানা গুঞ্জন দেখা দেয়। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন দলের ত্যাগী এবং পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। উপজেলা কমিটিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে অর্থ বাণিজ্য করার কথা বাতাসে উড়ছে।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, জেলায় দাখিলকৃত কমিটিতে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মেয়ে, ভাইসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় এমপি উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমানের ভাই, ভাগ্নেরা বড় বড় পদে আসীন হয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কমিটিতে এমন কিছু মানুষ স্থান পেয়েছেন যাদের কোনদিন আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচীতে দেখা যায়নি কিংবা জয় বাংলা স্লোগান দেননি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলেন, বর্তমান কমিটির বিগত এমপি নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও সবর্শেষ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন হলেন যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত আনোয়ার হোসেনের ভাই সানোয়ার হোসেন, রাসেল মতলিব তরফদার, আব্দুল মুমিন তরফদার, বিএনপিতে যোগদানকারী শমসেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, মুজিবুর রহমান, আব্দুল বাছিতসহ নৌকা বিরোধী অনেককেই গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ২০১৫ সালে মেয়র পদে খেলাফত মজলিশের সমর্থনে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করেছিলেন নজরুল ইসলাম যিনি স্কুল জীবনে ছাত্র শিবিরের সাথে সম্পর্ক ছিলো তিনিও এই কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন। রয়েছেন জামাত সমর্থিত একজন। প্রবাসে বসবাস করেন হেফাজত নেতা শফিকুল ইসলাম সাছি মোল্লার নামও রয়েছে ওই কমিটিতে। কমিটিতে স্থান হয়নি দলের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের।
তাদের অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে প্রবীণদের কমিটিতে রাখলেও তারা অভিযোগ করছেন সম্মানজনক পদ পাননি। কোনোদিন রাজনীতি না করেও বড় পদে স্থান পেয়েছেন বিতর্কিতরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, ৭১ সদস্যের কমিটিতে সরাসরি হেফাজত, বিএনপি রাজনীতিতে জড়িত এমন তিনজন রয়েছেন। প্রস্তাবিত কমিটি আত্মীয়করণ ও পরিবারতন্ত্র হিসাবে রূপ নিয়েছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি আসলাম ইকবাল মিলনের মেয়ে রোকসানা আক্তার, ভাই আব্দুল জব্বার, আরেক আত্মীয় আশরাফুল ইসলাম বদরুল ও ফারুক আহমদ স্থান পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক এ এস এম আজাদুর রহমানের ভাতিজা, চাচাতো ভাইও কমিটিতে রয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেও আছেন পাশাপাশি ভাগ্নে সাহিদ মিয়া, চাচাতো ভাই মোশাহিদ আলী, যুবলীগ নেতা আব্দুল বাছিতকেও নেয়া হয়েছে কমিটিতে। এছাড়াও এমপি আব্দুস শহীদসহ উনার আরো ৩ ভাই গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের এক নেতা জানান, এখন আর দলের কাজ করা লাগে না। আত্মীয় নেতা হলেই পদ পাওয়া যায়। তার প্রমাণ কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দাখিলকৃত কমিটি। বড় বড় নেতারা তাদের আত্মীয়স্বজনদের কমিটিতে ঢুকিয়েছেন। তাহলে বাকীরা কি করবেন।
তিনি বলেন, পুরা কমিটি সিন্ডিকেট। এমপি, চেয়ারম্যান ও সভাপতি, সম্পাদকের পছন্দ ও আত্মীয়স্বজনসহ প্রায় ২০ জনই কমিটিতে রয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলা কমিটিতে দাখিলকৃত উপজেলা কমিটির কথা জানাজানি হওয়ায় তৃনমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।