শেরপুর প্রতিনিধি
লাশ দাফনের জন্য কবরস্থান পেল শেরপুরের হিজড়ারা। গত শুক্রবার বিকালে কবরস্থানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলার সদ্য বিদায়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। এসময় তার স্ত্রী পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি-পুনাকের সভাপতি সানজিদা হক মৌ সেখানে তিনটি গাছ লাগান।
শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া-সুতিরপাড় এলাকায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর গুচ্ছগ্রামের পাশেই ১১ শতক জমিতে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে কবরস্থানটি নির্মাণ করা হয়। পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে জমি কিনে শেরপুরের হিজড়াদের জন্য কবরস্থানটি নির্মাণ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল মাহমুদ, সদর থানার ওসি বছির আহমেদ বাদল, জনউদ্যোগের আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, সংস্কৃতিকর্মী এসএম আবু হান্নান ছাড়াও হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য ও স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
কবরস্থান পেয়ে উচ্ছ্বসিত সেখানকার হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিশি সরকার বলেন, আমরা পুলিশ সুপার এবং তার সহধর্মিণীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের আনন্দে শরীক হয়েছেন, শেষ বিদায়েও পাশে থাকার ব্যবস্থা করলেন। মৃত্যুর পর আমাদের মরদেহ দাফনের জন্য কবরস্থান নির্মাণ এবং লাশ দাফনের দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা তাদের কাছে চিরঋণী হয়ে গেলাম।
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘জনউদ্যোগ’ শেরপুর কমিটির আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বছরের ৩০ অক্টোবর শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন তার সহধর্মিণীও। সেই অনুষ্ঠানেই তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর পর লাশ দাফন নিয়ে বিড়ম্বনার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। তখনই তারা কামারিয়ার সরকারি গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী হিজড়াদের জন্য আলাদা কবরস্থান নির্মাণের ঘোষণা দেন। জামালপুর জেলায় সদ্য বদলী হওয়া এই পুলিশ সুপার শেরপুর থেকে বিদায়ের আগেই হিজড়াদের লাশ দাফনের জন্য কবরস্থানটির ব্যবস্থা করলেন। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, কবরস্থান নির্মাণের মাধ্যমে আমি কেবল একটি মানবিক কাজে সামিল হতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি, সবার ভালোবাসায় একদিন হিজড়ারা অব্যশই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। সমাজের অন্য মানুষের সঙ্গে একই মর্যাদায় বাঁচতে পারবে। যেখানেই থাকি না কেন, শেরপুরের হিজড়াদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা অব্যাহত থাকবে।
তিনি এখানকার হিজড়াদের কারো মৃত্যু হলে তাকে জানাতে বলেন এবং লাশ দাফনের সব ব্যয় বহনের ঘোষণা দেন।
২০১৮ সালে জনউদ্যোগের অনুপ্রেরণায় শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থা গঠন করা হয় বলে নাগরিক প্ল্যাটফর্মটির জেলা কমিটির সদস্যসচিব হাকিম বাবুল জানান। তিনি আরও বলেন, সেসময়ের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুরের প্রচেষ্টায় সমাজসেবা বিভাগ জেলার ৫২ জন হিজড়াকে তালিকাভুক্ত করে আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সে সময়ের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে তালিকাভুক্ত সব হিজড়ারকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হয়। জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় শেরপুর সদরের ১২ নম্বর কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর খাস জমির উপর নির্মিত হয় সরকারিভাবে দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর গুচ্ছগ্রাম। ২০২১ সালের ৭ জুন ৪০ জন হিজড়ার মাঝে ওই গুচ্ছগ্রামে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করে তাদের পুনর্বাসন করা হয়।