মোঃ আব্দুল কুদ্দুস কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে “মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার পুলিশ হবে জনতার” এই শ্লোগানে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় মিরপুর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আয়োজনে আমলাসদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্ত্বরে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল করিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত পিপিএম (বার) বলেন- “এই কুষ্টিয়া অঞ্চলে ইতিপূর্বে ছিলো অস্ত্রের ঝণঝনানি। বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি, লাল পতাকা, নীল পতাকা, জনযোদ্ধা, শ্রমজীবি মুক্তিসহ অসংখ্য আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি। ছিলো সিরাজ বাহিনী, মফিজ বাহিনীর দাপট। আপনারা শান্তিতে বসবাস করতে পারছিলেন না। চাঁদাবাজের কারনে ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছিলেন না। রাত ৯টার পরে কেউ বের হতে সাহস পেতো না। টেন্ডার দিতে গেলে তার কাটা মাথা পড়ে থাকতো অফিসের সামনে। বর্তমানে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগের ফলে পূর্বের অবস্থা পাল্টানো সম্ভব হয়েছে।” “মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার, পুলিশ হবে জনতার” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পুলিশ যে জনতার হবে এই সুযোগ আমরা এতদিন পেয়েছিলাম না। আমাদের থাকার জায়গা ছিলো না। সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার মতো অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ ছিলো না। স্বল্প বেতন ছিলো। যা দিয়ে আমরা চলতে পারতাম না। আমরা (পুলিশ) নিজেরাই যখন গরীবানা হালে থাকতাম, তাহলে কেমন করে আমরা সেবা দিবো? কিন্তু বর্তমান সরকার আমাদের সেই জায়গা থেকে উত্তোরণ ঘটিয়েছে। বর্তমান সরকার আমাদের পুলিশকে থাকার জায়গা করে দিয়েছেন, বেতন অনেক গুনে বাড়িয়ে দিয়েছেন, শতভাগ রেশন দিয়েছেন, নতুন অস্ত্র দিয়েছেন, গাড়ী দিয়েছেন, আমাদের সকল সরঞ্জাম দিয়েছেন।”তিনি বলেন, “আমি জনতার পুলিশ হবই। কয়েক বছর আগে পুলিশের সেবা আর বর্তমান পুলিশের সেবার অনেক পার্থক্য। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, কুষ্টিয়া সকল থানা শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত। থানায় জিডি করতে কোন টাকা লাগে না। পুলিশ ভেরিফেকশন, ক্লিয়ারেন্স নিতে কোন টাকা লাগে না। আমি কুষ্টিয়াতে যোগদান করার সময় ৩১% মামলার স্বাক্ষী হাজির হতো আদালতে। বর্তমানে ৭৮% মামলার স্বাক্ষী হাজির হন। আমি আপনাদের কাছে বলতে চাই, আপনারা পুলিশের কাছে কি ধরনের সেবা নিতে চান, আমার কাছে বলেন, পুলিশ আপনাদের সকল সেবাই দিবে। আপনারা যে ধরনের সেবা চান পুলিশ দিতে প্রস্তুত। মাত্র একটা ফোন দিবেন, যখন ইচ্ছা। যত রাতই হোক, আমাদের জানান। মাদক, বাল্য বিবাহ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন যা তথ্য দিতে চান আমি সকলের জন্য উন্মুক্ত করেছি। পুলিশের কোন সেবা নিতে কুষ্টিয়ায় টাকা লাগবে না। যদি কোন পুলিশ অর্থ লেনদেন বা টাকা চাই আমাকে জানাবেন। আমি দূর্নীতি মুক্ত পুলিশ চাই। আমি জনতার পুলিশ হতে চাই। এজন্য আপনাদের কাছে চাওয়া শুধু আইন মেনে চলবেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবেন। মাদক বিক্রেতা কুষ্টিয়া জেলায় থাকবে না। আমি কোন মাদক বিক্রেতাকে কুষ্টিয়ায় থাকতে দেবো না। কোন সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীকে কুষ্টিয়ায় থাকতে দেবো না। এটা আমি হাত তুলে ওয়াদা করছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, আজাদ রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা শরীফ, মিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রকিবুল হাসান। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালামের পরিচালনায় অনান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিরপুর পৌর মেয়র এনামূল হক মালিথা, সুরেকা গ্রুপের চেয়ারম্যান অজয় সুরেকা, কেএনবি ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান নাসির, মডার্ন পাউড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকরাম হোসেন বাবু, সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল হক রবি, পোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান বিশ্বাস মজনু, আমলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মালিথাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকগণ। অনুষ্ঠান শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গান পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য সংঙ্গীত শিল্পী জিনিয়া জাফরিন লুইপাসহ স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।