চলনবিল প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় গত ৮ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৪শ’৩০ কিলোমিটার বিভিন্ন ধরনের নতুন পাকা সড়ক নির্মাণ করেছে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ২শ’ ৫০ কোটি টাকা। এসব সড়ক নির্মাণের কারণে উপজেলার গ্রামীণ জনপদে দীর্ঘদিনের দূর্ভোগ যেমন দূর হয়েছে, তেমনি মানুষের সহজ যাতায়াত নিশ্চিতসহ গ্রামে মিলছে শহরের সুযোগ-সুবিধা। গ্রামীণ অর্থনীতি হয়েছে গতিশীল ও শক্তিশালী।
উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়নের জঙ্গলখামার। বৃহৎ এই গ্রামটির সিংহভাগ মানুষ কৃষি পেশার সাথে জড়িত। ফসল চাষাবাদ আর গো-খামার করে জীবিকা নির্বাহ করে বেশিরভাগ মানুষ। এই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও রয়েছে। গ্রামটির চলাচলের একমাত্র মাটির সড়কটি যুগের পর যুগ ধরে বিপর্যস্ত ছিল। দুই পাশে ভেঙ্গে সরু হালটে পরিণত হয়েছিল। এমন অবস্থায় যানবাহন চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতে পুরো সড়কে কাদা হয়ে যেত। দীর্ঘদিন এমন সমস্যার কারণে গ্রামের কৃষকেরা কোন মালামাল আনতে পারতো না। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে কষ্ট পোহাতো। চলতি বছর প্রায় ১ কিলোমিটার সড়টি পাকাকরণ করা হয়েছে। এতে অবসান হয়েছে গ্রামটির দুই হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের সব দূর্ভোগের। এখন চলাচল করছে সব ধরনের যানবাহন।
এই গ্রামের দুগ্ধ ব্যবসায়ী মো. মতিন মিয়া জানান, আমি প্রতিদিন গ্রামের খামারীদের কাছ থেকে কয়েক মণ গরুর দুধ সংগ্রহ করে মিলে বিক্রি করি। রাস্তাটি এমন খারাপ ছিল যে দুধ সংগ্রহ করে তা ভ্যান ঠেলে নিয়ে যাওয়া কষ্টকর ছিল। এখন সড়কটি পাকা করায় খুব ভাল হয়েছে। দুধ সংগ্রহ করে নিশ্চিন্তে মিল কারখানায় নিয়ে বিক্রি করতে পারছি। কোন সমস্যা হচ্ছে না।
একই গ্রামের কৃষক ছলিমউদ্দিন জানান, সড়কটি খারাপ থাকায় আমরা মাঠের ফসল বাড়িতে আনতে পারতাম না। ফসল বিক্রির জন্য হাট-বাজারে নিতে পারতাম না। সার-বীজ আনতে পারতাম না। এখন পাকা হবার পর আমাদের সেই দুঃখ দূর হয়েছে। আমরা সবসময় মালামাল নিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারছি।
একই গ্রামের আব্দুল হক জানান, রাস্তা পাকা হওয়াতে আমি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা নিয়ে সবসময় যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারছি। এখন সব মানুষের যাতায়াত খুব সহজ হয়েছে।
একইভাবে উল্লাপাড়া উপজেলার ১৪টি ইউয়িনে গত ৮ বছরে প্রতিটি কাঁচা রাস্তার তালিকা তৈরি করে এগুলো পাকাকরণ করা হয়েছে। বিশেষ করে এ উপজেলার চলনিবিল অধ্যুষিত পশ্চিমাঞ্চলের বন্যা কবলিত উধুনিয়া, বড়পাঙ্গাসী, মোহনপুর, বাঙ্গালা ইউনিয়নের ফসলের মাঠের ভিতর দিয়ে ডুবো সড়ক (সাবমার্জিবল) নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বদলে গেছে গ্রামীণ জনপদের চিত্র। প্রতিটি গ্রামেই পাকা সড়ক নির্মাণ করায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল হাট-বাজারে বিক্রি, সার ও বীজ আনা-নেয়া, দুগ্ধ বিক্রিসহ যেকোন মালামাল আনা-নেয়া করতে পারছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পাচ্ছে। রাস্তা পাকা হওয়ায় গ্রামের বাজারেই সব ধরনের পণ্য কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। দিন রাত গ্রাম থেকে যানবাহনে চড়ে দেশের যে কোন প্রান্তে আসা-যাওয়া করা যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা শহরের স্কুল-কলেজে আসা যাওয়া করতে পারছে। এমন সুবিধার কথা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ কোনদিন চিন্তাও করতে পারতো না। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে এখন শক্তিশালী ও গতিশীল হয়েছে এ উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতি।
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সায়েদ জানান, গত ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত উল্লাপাড়া উপজেলায় জাতীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের সার্বিক সহযোগিতায় ৪শ ৩০ কিলোমিটার নতুন গ্রামীণ সড়ক পাকা করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২শত ৫০ কোটি টাকা। আরো অনেক গ্রামীণ রাস্তা পাকাকরণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলো শেষ হলে এ উপজেলার পুরো চিত্র পাল্টে যাবে।
উল্লাপাড়া-সলঙ্গা আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম জানান, উল্লাপাড়া উপজেলাকে দেশের মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রামকে শহরে রূপ দিতে উপজেলার সব গ্রামের রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট উন্নয়নের জন্য আমরা তালিকা করে কাজ করছি। ইতিমধ্যে যেসব এলাকার রাস্তা পাকা করা হয়েছে সেসব এলাকার মানুষ সুবিধা ভোগ করছে। এ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।