আবু তাহের চৌধুরী, সিলেট
জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে সিলেট থেকে এবার কোন নেতার স্থান হয়নি। বৃহস্পতিবার যুবদলের ১১৪ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কমিটিতে সিলেটের কাউকে না রেখে বিভাগীয় পদগুলো কেড়ে নিয়েছেন সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ৩ নেতা। সিলেটের কাউকে না রাখায় দলের তৃণমূলে দু’দিন থেকে সমালোচনার ঝড় বইছে। দলীয় সুত্র জানিয়েছে, সিটি করপোরশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অনুসারিদের ঠেকাতে সিলেটের কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি। পদগুলো এমন ভাবে বণ্টন করা হয়েছে যাতে ‘আমিও নাই, তুমিও নাই’ এমন পদ্ধতিতে। সিলেটের ইতিহাসে এই প্রথম যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিলেট জেলাকে শূন্য করে রাখলো দলের হাইকমান্ড। অতীতে বিভাগীয় সহ-সভাপতি পদটি সবসময় সিলেটে দেয়া হত। কারণ বিভাগের ৪ জেলার মধ্যে সিলেট হল বিভাগীয় শহর। গত বিএনপি সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সহকারি সচিব কাইয়ুম চৌধুরী। তার সাথে বিভাগীয় সহ-সাধারন সম্পাদকের পদ পেয়েছিলেন সুনামগঞ্জের আশিকুর রহমান চৌধুরী। ঠিক পরের কমিটিতেও একই ধারাবাহীকতায় কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির পদ দেয়া হয়েছিল সদ্য সাবেক সিলেট জেলা যুবদলের সভাপতি আব্দুল মান্নানকে। আর সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ চেয়ারম্যান। বিগত দিনের এ ধারাবাহীকতা এবারই প্রথম ব্যতয় ঘটলো। সিলেটের কাউকে গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে না রেখে বাকি ৩ জেলায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে দলের গুরুত্বপূর্ণ এসব পদ। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি আনসার উদ্দিনকে সহসভাপতি (সিলেট বিভাগ), হবিগঞ্জের ইলিয়াস মিয়াকে সহ সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বলকে সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) মনোনীত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটিতে।সিলেট থেকে কেউ দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পাওয়ার কারণ হিসেবে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করছেন অনেকে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এই পদগুলো সরিয়ে দেয়া হয়েছে বাহিরের জেলায়। তবে আরেকটি সুত্র জানিয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইচ্ছায় এমনটি করা হয়েছে। সম্প্রতি গঠিত সিলেট যুবদলের কমিটিতে মেয়র আরিফ বলয়ের কেউ স্থান পাননি। এতে তারা বিদ্রোহ করেন কয়েকদিন। এমনকি মেয়র আরিফসহ বিএনপির ৪ নেতা পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। এরপর তারা আশা নিয়ে বসে ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদের কাউকে স্থান করে দেয়া হবে। সে লক্ষে মেয়র আরিফ জেলা যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক চৌধুরী ও জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিকুর রহমানের নাম তারেক রহমানের কাছে প্রেরণ করেন। সুত্র জানিয়েছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুছ তালুকদার দুলুর মাধ্যমে মেয়র আরিফ এই তালিকা পাঠান। এই তিন জনের নাম প্রেরণ করলেও তিনি সাদিকুর রহমান সাদিকের নাম শক্ত করে তুলে ধরেন বলে সুত্র দাবি করছে। এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলয়ের দু’জনের নাম ছিল বলে দলের একটি সুত্র জানিয়েছে। তারা হলেন, জেলা যুবদলের আহবায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু ও মহানগরের আহ্বায়ক নজিবুর রহমান নজীব। সুত্র জানিয়েছে, মুক্তাদির বলয়ের একজনকে কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্ব দেয়া হলে আরিফ বলয়ের একজনকে অন্য কোন পদ দিয়ে ব্যালেন্স না করতে মূলত সিলেটকে শূন্য করে পদগুলো বাকি ৩ জেলায় ভাগ করে দিয়েছে হাইকমান্ড।আর এই সুযোগ হাতিয়ে নেন ৩ নেতা। যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ খবর পেয়েই হাইকমান্ডকে ম্যানেজ করে তাঁর নিজ জেলা সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আনসার উদ্দিনকে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি করে পদটি ভাগিয়ে নেন। আর যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর ব্যক্তিগত পছন্দ ছিল হবিগঞ্জের ইলিয়াস মিয়াকে। তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।সিলেট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুও এতে ভাগ বসাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি মৌলভীবাজার জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বলকে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাংগঠনিক পদ পাইয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে পাপলু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এতে তার কোন হাত নেই। দলের হাইকমান্ড যেটা ভালো মনে করেছে, সেটা করেছে। সিলেটকে নেতৃত্ব শূন্য করার ব্যাপারে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি সিলেটের ৩ জনকে কেন্দ্রে স্থান করে দেয়ায় কেন্দ্রীয় যুবদলকে অভিনন্দনও জানান। পাপলু অভিনন্দন জানালেও যুবদলের কমিটি নিয়ে সিলেটে ক্ষোভের শেষ নেই। তৃণমূলে রয়েছে তীব্র অসন্তোষ। জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিকুর রহমান সাদিক কেন্দ্রে স্থান না পাওয়ায় বেশ মর্মাহত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, শাহজালালের পবিত্র মাটিতে এই পদ পাওয়া প্রাপ্য ছিল। কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে বঞ্চিত করা হয়েছে। সাদিক আরো বলেন, সিলেটের কোন এক নেতা তার বিরুধী মতের লোকদের বাদ দিতে গিয়ে সিলেট যুবদলের ত্যাগী নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব শূন্য করে রেখেছেন।তবে তৃণমূলের নেতারা ভিন্ন ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন ফেসবুকে। জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ সাকের তার ফেসবুক আইডিতে যা লিখেছেন এর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হল। তিনি লিখেছেন, ছাত্রদল, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিলেট জেলার কেউ নাই বলে আমি অবাক হইনি। কারন, সিলেট একমাত্র জেলা, যেখানের নেতারা কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতার ফটোতে জুতাপিটা করেছে। লাইভে এসে সরাসরি, সংবাদ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতা এমনকি দলের সর্বোচ্ছ নীতি নির্ধারকদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে কমিটি বিক্রির অভিযোগ তুলেছে। সিলেটের এমন কোন ইউনিট কমিটি নেই যেই কমিটি নিয়ে বিদ্রোহ হয়নি বা সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপ নাই। তাছাড়া যে জেলার উপজেলা বা ওয়ার্ড কমিটির বিরোধ কেন্দ্র সমাধান করে সেই জেলায় কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার যোগ্যতা আছেইবা কার? তিনি আরো লিখেছেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে যেখানে পার্শ্ববর্তী ৩টি জেলা বড় বড় বিক্ষোভ মিছিল করে, তখন সিলেটের বাস্তবতা ৮০ ভাগ বক্তা (স্টেইজের নেতা), ২০ ভাগ শরুতা নিয়ে রেজিস্ট্রারি মাঠে মিটিং করে। যদিও মাঝে মাঝে ছাত্রদল বড় বড় বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেখা যায়, তাও বছরে ৪/৫ টির বেশী নয়। তাই আজ সিলেট বঞ্চিত বলে চিল্লাইয়া লাভ নাই। সিলেটকে বঞ্চিত আপনারাই করেছেন।