কচুয়া, চাঁদপুর : ০৬ ডিসেম্বর চাঁদপুরের কচুয়া পাক-হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্থানী সেনারা কচুয়ার মাটি থেকে বিতারিত হয় এবং কচুয়া স্বাধীন হয়। সন্তান হারা মায়ের কান্না, ছেলেহারা বাবার আর্তনাদ ও স্বামীহারা করুন আত্মচিৎকার বাংলার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। এমনই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে অরুনাদ্বয়ের অগ্নিস্বাক্ষর কচুয়ার বীরমুক্তিযোদ্ধারা কচুয়ায় অবস্থানকারী পাক-হানাদার বাহিনীকে আক্রমনে সকল প্রস্তুতি গ্রহন করে। ৫ ডিসেম্বর সোর্স মারফত এ সংবাদ জানতে পেরে খান সেনারা জানতে পেরে তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য আকুতি জানায়। এ সময় পাকিস্তানী সেনারা চারিদিকে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর আঘাতে আঘাতে পর্যদুস্থ হচ্ছিল। পালাতেও শুরু করছে তারা। ইতিমধ্যে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, মতলব, হাজীগঞ্জ কুমিল্লার দেবিদ্বার, মুরাদনগর, চান্দিনা বরুড়াসহ বহু অঞ্চল মুক্ত হতে শুরু করছে। ৫ ডিসেম্বর দিবাগত গভীর রাতে পাকিস্তানী সেনাদের একটি সু-সজ্জিত ব্যাটেলিয়ান কচুয়া-কালিয়াপাড়া একমাত্র পাকা রাস্তার কচুয়ার অদুরে লুন্তি গ্রাম নামক স্থানে তাদের গাড়ীর বিশাল বহর রেখে কাক ডাকা ভোরে কচুয়ার অভিমুখে লংমার্চ করে স্বল্প সময়ে কচুয়া বাজারে পৌছে বাজারটি লুট, পাট করে এবং বাজারটি জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। একটি গ্রুপ উল্লেখিত লুন্তি গ্রামটি ঘেরাও দিয়ে ছল-ছাতুরির অংশ হিসেবে মর্টার সেল নিক্ষেপ করে। গ্রামটি জালিয়ে দেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিলেও রাজাকাররা বিভিন্ন পথে পালিয়ে যাওয়ার কারণে গ্রামটি নিশ্চিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। তাদের আগমনী বার্তায় এ গ্রামের নারী-পুরুষ ও যুবতীরা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কারন ওই গ্রামের খন্দকার বাড়ির সামনে কচুয়ার একমাত্র পাকা রাস্তার ট্রেন্স কাটাসহ বিভিন্নভাবে বেরিকেড তৈরী করে মুক্তি যোদ্ধা সালাহ উদ্দিন মানি, ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলম, দেলোয়ার হোসেন, আলী আশ্রাফ, আবু তাহেরসহ মুক্তিযুদ্ধাকালীন ডেপুটি কমান্ডার জাবের মিয়া ও ইয়াকুব মাষ্টারের নেতৃত্বে হোসেনপুর বাজারের উত্তর পার্শের ব্রিজটি গুড়িয়ে দেয়। পরের দিন ৬ ডিসেম্বর পাক-হানাদারমুক্ত কচুয়ার দায়িত্ব গ্রহন করেন। যুদ্ধকালীন (এফ. এফ) কমান্ডার আবদুর রশিদ পাঠান। লোম হর্ষক আজব কাহিনী ও ধ্বংসলীলায় তাকে বিব্রত অবস্থায় ফেলে দেয়। এ অবস্থায় তীক্ষè প্রতিভার অধিকারী দুঃ সাহসী বিএলএফ কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদুর রহমা এর নেতৃত্বে তখনও কচুয়ার মুক্ত অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন চলতে থাকে। প্রশিক্ষন পরিচালনা করেন দক্ষ প্রশিক্ষক মো. জাবের মিয়া কচুয়া মুক্তির পর কচুয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডার আঃ মবিন মিয়া (ডেপুটি কমান্ডার), জাবের মিয়া, আবু তাহের মাষ্টার, উসমান গণি পাটোয়ারী, শাহ আলম পাটোয়ারী, দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম, হেদায়েত উল্লাহ, আঃ হালিম, একেএম মফিজুল ইসলাম, আবু তাহের আবিদ, আঃ বারী, আঃ রহিম, গাজী ইউসুফ, সালাহ উদ্দিন মানিক, মো. হাফিজ পাটোয়ারী, মো. হানিফ, জুনাব আলী, মোঃ চারু মিয়া, গাজী মো. সফিকুল ইসলাম, মো. নুরুল ইসলাম, রুহুল আমিন মজুমদার, আবুল বাশার, রুহুল আমিন মোল্লা, বারিক মিয়া, সুলতান আহম্মেদ ফরাজী, আঃ মতি, আনোয়ার শিকদার, খায়ের মাষ্টার, আলী আহাম্মেদ, সফিকুর রহমান, এবং হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, মতলব, বরুড়া, চান্দিনা, লাকসামসহ বিভিন্ন রনাঙ্গনের বেশ কিছুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা মরনপণ লড়াইয়ে সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এদিকে ১৯৭১ রনাঙ্গনে কচুয়ার সুর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনেক কষ্টের বিনিময়ে সারাদেশের ন্যায় কচুয়া উপজেলাকে পাক-হানাদার বাহিনীর হাত থেকে আজকের এই দিনে মুক্ত করলেও কচুয়ার সরকারি কিংবা ব্যক্তি বিশেষ উদ্যেগে এ দিনটি উৎযাপনে নেই তেমন কোন কর্মসুচি। কচুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. জাবের মিয়া আমাদের এ দিনটি স্মরনীয় করে রাখতে আমরা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকি।